এই প্রথম নিজের বাসার জন্য বোতল পেইন্ট করছি। শুধু আমার জন্য হলে বেশি একটা প্রেসার নিতাম না, ইচ্ছা মতন কোন একটা ডিজাইন ঠিক করে মনের মতন একে ফেলতাম। এখন যেহেতু সাথে আরেকজন থাকে সেজন্য একটু ভাবতে হলো। কিছুটা ভেবে চিন্তে দুইজনের পছন্দের মিল রেখে কিছু একটা বানাতে চাচ্ছিলাম।
আর এই মিল খুঁজতে গিয়ে পড়লাম মহা বিপদে। কোন ডিজাইনই মাথায় আসে না। আমার বেগতিক অবস্থা দেখে সে বললো "তুমি পুরাপুরিই নিজের মতন করে করো, যেভাবে ভালো হয়"। এই কথা শুনে কিছুটা নির্ভার হয়েও মনের মধ্যে খচখচ করছিল। পরে দেখলাম এমন খচখচ করতে থাকলে কাজ আর আগাবে না। তাই সব বাদ দিয়ে আঁকা শুরু করলাম!
বোতল পেইন্টিং এর সবচেয়ে কষ্টকর দিক হলো রঙ করার আগে সারফেস পরিষ্কার করা। স্টিকার লেবেল ঘষে তুলতে আধা ঘন্টা তো লাগেই! এই কাজ সহজে কিভাবে করা যায় তার জন্য একবার নেট ঘেটে ছিলাম। বের হয়ে এসেছিল বেকিং পাউডার আর লিকুইড ডিটারজেন্ট মিক্স করে ঘসলে স্টিকারের আঠা উঠে যায়। শুনতে সহজ লাগলেও এই প্রসেসেও অনেক কষ্ট করতে হয়।
চাচ্ছিলাম গতানুগতিক যেরকম কাজ করি তার থেকে কিছুটা ভিন্ন ধাঁচের করতে। যেরকম প্যাটার্নের কাজ আগে কখনও করি নাই। কিন্তু নতুন কোন ডিজাইন করতে গেলেই আমার যেই সমস্যাটা হয় তা হলো নিখুঁত না হওয়া। একদম নতুন ডিজাইন করার সময় এক্সপেরিমেন্টাল মুডে থাকার কারণে নিখুঁত করার থেকে ডিজাইনে বেশি মনোযোগ দিতে হয়। এই কাজেও একটু মনোযোগ দিলে দেখা যাবে ডিটেইলিংগুলা কিছুটা আনাড়ি।
আমি এমনিতে পুরো বোতলকেই একটা সারফেস ধরে পেইন্ট করি। কিন্তু এবার ছোট ছোট কয়েকটা খোপ করে নিয়েছি। প্রতিটা খোপে ভিন্ন ডিজাইন করার চেষ্টা করেছি।
প্রথমে ভেবেছিলাম কয়েকটা খোপ ফাঁকা রেখে কাজ করবো। কিন্তু পরে দেখলাম পুরো জায়গা ভরাট করে কাজ করলে বেশি ভাল দেখায়।
কালার কম্বিনেশনের ক্ষেত্রেও ডিজাইনের মতন সেইম সমস্যায় পড়েছিলাম। কোন রঙের উপর কোনটা ফুটবে এটা পুরাপুরি আপ্লাই করার আগে ঠিক মতন ধরা যায় না। কিন্তু সব শেষ করে এই পুরো কাজটা পরের বার যখন আবার রিপিট করতে যাই তখন সব ঠিকঠাক হয়ে যায়। সময়ও প্রায় অর্ধেক লাগে! খালি নতুনত্ব না থাকায় সেইম কাজ আরেকবার করার আগ্রহ আসে না। অনেক পেইন্টার শুধুমাত্র এই কারণেই এক ডিজাইনের কমিশন বার বার নিতে চায় না!
ব্লক ভরাট করার জন্য ছোটবেলায় zentangle pattern শিখেছিলাম। জেনট্যাঙ্গেল হলো অনেকটা ডুডলেরই আপডেটেড ভার্সন। তো সেখান থেকেই কিছু প্যাটার্ন ট্রাই করে দেখছিলাম।
পুরাটা শেষ করার পর দেখে মনে হচ্ছিল এখনও ফাঁকা লাগছে। পরে বাকি অংশটুকুও ভরাট করে দিলাম।
এই পার্টগুলোতে আফ্রিকান বোহেমিয়ান প্যাটার্ন এর থিম করার ট্রাই করেছি।
এই হলো ফুল ভার্সন। আঁকাআঁকি শেষ হওয়ার পর স্যাটিসফাইং ফিলিংটা সব সময় আসে না। কিন্তু এই কাজ শেষে মনটা ভরে গেলো! এখন হাত থেকে পরে বোতল না ভাঙলেই হলো! দেখা যাক কতদিন টিকে!
ওহ এই বোতলেরই অন্যপাশে এই ডিজাইন করেছিলাম। প্যাটার্নের দিক থেকে প্রতিটা পাশই একেকটার থেকে আলাদা।
এই ছিল আমার এক্সপেরিমেন্টাল কাজ। ভাল মতন খেয়াল করলে দেখা যাবে কিছু কিছু জায়গা দেখতে আনাড়ি হাতের কাজ লাগছে। কোনটার পর কোন রঙ বা ডিজাইন দিবো এটা নিয়ে কনফিউজড থাকলে যা হয় আরকি!
ওহ আচ্ছা এই কাজে কি কি জিনিস কিভাবে ব্যবহার করেছি তা বলে নেই। ধোয়া পাল্লার কাজ শেষে acrylic marker দিয়ে পুরাটুকু কালার করে ফেলেছি। বোতল কালারিং এর ক্ষেত্রে অ্যাক্রেলিক মার্কার ছাড়া সহজ আর কোনটা লাগে না!করার পর মনে হচ্ছিল কালারের স্থায়ীত্ব বাড়ানোর জন্য একটা সচ্ছ লেয়ার কোটিং করে দিতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু গ্লাস কালারের জন্য এমন কিছু পাওয়া যায় কিনা জানা নাই!
কাজ শেষ করার পর বোতলটা আমার থেকে তারই বেশি পছন্দ হয়েছে। বগল দাবা করে নিজের সম্পত্তি বলে জাহির করে নিয়েছে! দেখতে ভালোই লাগে! প্লাস্টিকের বোতলের থেকে একটু কষ্ট করে কাচের বোতলে খাওয়াটাই বেশি উপভোগ করি!