অভ্যর্থনা

একগ্রামে ষাটোর্ধ্ব বয়োবৃদ্ধ হাশেম মিয়া নামে একজন বসবাস করত। ষাটোর্ধ্ব বয়োবৃদ্ধ বলাতে হয়ত কিঞ্চিৎ ভুল হয়েছে আমার। কারন যদিও সে ষাটোর্ধ্ব তবুও বয়োবৃদ্ধ শব্দটা যেন তার নামের সাথে যেতে চায় না। আধা কাচা পাকা দাড়ি, চামড়া টানটান যেন পচিশ বছরের তাগড়া যুবক, পুরো গ্রামে তার মতো সুদর্শন আর একটি খুজে পাওয়া দুষ্কর। গ্রামের মাটিতেই তার বেড়ে উঠা, ছোটকাল থেকেই তাদের অভাবের সংসার, পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় তার বাবার সাথে তাকেও তার পরিবারের হাল ধরতে হয়েছিল। তার বাবা ছিল কৃষক, ছোটবেলায় সকাল হলেই বাবার সাথে কৃষিকাজ করতে বিলে চলে যেত। তাদের দুটি গরু ছিল, সে গরুগুলোকে নিয়ে বিলে চড়িয়ে, বাবার সাথে বিলে কৃষিকাজে লেগে পরত। ছোটকাল থেকেই তার পশুপাখির প্রতি আলাদা এক মায়া কাজ করত।

IMG_20210928_112710.jpg

লেখাপড়ার প্রতি তীব্র ইচ্ছা থাকা স্বত্ত্বেও স্কুলের বারিন্দাতেও তার যাওয়া হয়ে উঠেনি। বাবার সাথে অভাবের সংসারের হাল ধরতে গিয়ে এবং ছোট-ভাইবোনদের মানুষ করতে গিয়ে তার নিজেকে নিয়ে কাজ করা আর হয়ে উঠেনি। এতে তার বিন্দুমাত্র দুঃখ নেই। সে চায় তার স্বপ্নগুলো আর ছেলেমেয়েদের দ্বারা পূরণ করতে। তাই ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া সর্বোচ্চ সুযোগ করে দেয়ার জন্য তাদের শহরে বাসা করে দেন আর নিজে গ্রামে থাকেন। বছরের দুই ঈদেই কেবল তার পরিবার গ্রামে আসে।

রমিজ মিয়া তার গ্রামে ভালোই নাম ডাক আছে। গ্রামেই ছোটখাট কিছু ব্যবসা আর গ্রামে পুকুরে মাছ চাষ করে। এজন্য তাকে গ্রামেই থাকতে হয়। বিকাল হলেই তিনি গ্রামের বাজারের চায়ের দেকানে তার সমবয়সী বন্ধুদের সাথে চায়ের আড্ডায় মেতে উঠে। সবকিছু ভুলে গেলেও বিকেলে চায়ের আড্ডায় যোগ দিতে যেন তার কখনো ভুল হয় না। একদিন বিকেলে চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেয়ার সময় হঠাৎ তার দৃষ্টি বাইরের দিকে পরতেনা পরতেই, তিনি দেখলেন যে একটি কুকুর একপা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বাজারের মাঝে মুমূর্ষু অবস্থায় পরে কাতরাচ্ছে। তিনি চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলেন আর অপেক্ষা করতেছিলেন কেউ যদি সেই কুকুরটার কাছে যায়। কিন্তু না তার চায়ের কাপ খালি হয়ে গেলেও কেউ কুকুরটির পাশে যায় নি।

তারপর তিনি দোকানে চায়ের কাপটি রেখে, জগ থেকে ১মগ পানি ঢেলে, দোকান থেকে ৫ টাকার একটি বনরুটি হাতে নিয়ে কুকুরটির কাছে নিয়ে পাশে গিয়ে বসলেন। মগ থেকে পানি ঢালতেই কুকুরটি পানি পান করল। তারপর সেই বনরুটিটি ছিড়ে ছিড়ে কুকুরকে খাওয়ালেন। সন্ধ্যা নেমে আসার পর, তিনি বাড়ি ফিরে আসার সময় সেই কুকুরটি তার সাথে যাওয়ার জন্য বায়না ধরল। কুকুরটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে তার পিছু পিছু তার বাড়িতে চলে আসল। বাড়িতে আসার পর রমিজ মিয়া ছায়া দেখে কিছুটা অবাক হয়ে, পিছে তাকাতেই দেখে যে সেই কুকুরটিই। তারপর তিনি সেই কুকুরটিকে তার বাড়িতে অভ্যর্থনা জানালেন।

একজন অতিথি বাড়িতে আসলে বেভাবে অভ্যর্থনা জানানো হয় বা সেবা-যত্ন করা লাগে তিনিও সেভাবেই সেই কুকুরটিকে তার বাড়িতে সেবা-যত্ন করলেন কিছুদিনে মধ্যেই সেই কুকুরটি অয়া ভালো হয়ে যায় এবং কুকুরটি এ বাড়ির একজন স্থায়ী সদস্য হয়ে যায়।

এক মাঝরাতে কুকুরটি ঘেউঘেউ করে ডাকতে থাকে। সে শব্দে রমিজ মিয়ার ঘুম ভেঙে যায় এবং তিনি ঘর থেকে বাইরে বের হয়ে এলেন। বাইরে বের হয়ে তিনি দেখলেন যে তার গোয়াল ঘরের দরজা খোলা। তিনি সাথে সাথেই গোয়াল ঘরে গিয়ে দেখলেন তার গোয়ালশূন্য। সাথে সাথেই তিনি বাড়ির বাইরে বের তেই একজনলোককে দেখতে পারলেন যে গরুগুলোকে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি পেছন থেকে ঐলোকটিকে ডাক দেয়ার সাথে সাথেই লোকটি গগরুগুলো রেখে একদৌড়ে পালিয়ে যায়।

পরেরদিন প্রতিদিনের মতো বিকেলবেলা তিনি বাজারে গেলেন। সন্ধ্যার পর বাজার থেকে বাড়ি ফিরে দেখলেন সেই কুকুরটি মৃত্য দেহ। তা দেখে রমিজ মিয়া আবেগাপ্লুত হয়ে গেলেন। উনার ধারণা হয়ত সেই চোরটিই তার কুকুরটিকে মেরেছে। তিনি তার সে মৃত্যদেহটিকে অনেক কষ্টে বিলের মাটিতে পুতে আসল। আর এখানেই একটি নিষ্পাপ প্রাণের পরিসমাপ্তি ঘটল।

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
Join the conversation now
Ecency