অনেকদিন ধরে খালামণি বলছিলো আমি নাকি ভুলে গেছি তাকে। এখন আর আগের মতো ভালোবাসি না। এমনটা মনে হওয়ার একটাই কারণ তা হলো অনেকদিন ওদিকটায় যাওয়া হয় না। নানা ব্যস্ততার মাঝে সময় করে উঠতে পারি না। খালামণি প্রায়ই বলে দেখা করে যা, অনেকদিন তোদের সাথে আড্ডা দেই না। কিন্তু ঐ যে বললাম যাবো যাবো করে আর যাওয়া হয় না। কাল ঠিক করলাম যা কিছু হয়ে যাক আজ তো যাবই।
খালামণি আমাদের এখানে আসে না প্রায় ৪ মাস হলো। শুধু আমাদের বাসায় না সে এখন একা বাসার নিচেও নামতে পারে না। খালুবাবা-র অফ ডে মংগলবার, তাই প্রতি মংগলবার সে বাইরে হাটতে নিয়ে যায় খালামনিকে। সারাদিন বাসায় একা থাকে মানুষটা। একটু কথা বলার ও কেউ নেই। অসুস্থ শরীর নিয়ে সব কাজ একাই করতে হয় তাকে। খালুবাবা ও হেল্প করে যতোটুকু পারে।
খালামণির প্রেগন্যান্সির ৭ মাস হলো। নভেম্বরে ডেলিভারির সম্ভাব্য ডেইট। অনেক বছর অপেক্ষার অবসান ঘটতে চলেছে। খালামনির প্রেগন্যান্সিতে কমপ্লিকেশন ছিলো অনেক। বিয়ের পর হঠাৎ - ই তার ডায়বেটিস, হাই ব্লাড প্রেসার দেখা দেয়। ৩ বেলা নিয়ম করে ইনসুলিন নিতে হয়। ডাক্তার তো বলেই দিয়েছিলো এই অবস্থায় কন্সিভ করা সহজ কিছু না। এমনকি মিসক্যারেজ ও হতে পারে। এই পুরো সময়টাতে খালামণির পাশে যে মানুষ টি ছিলো তিনি হচ্ছেন খালুবাবা৷ নিজেকে সামলে সারাক্ষণ খালামণিকে সাহস যুগিয়ে গিয়েছেন। খালামণি সবসময় বলতো তার জীবনের বেস্ট ডিসিশন নাকি খালুবাবা। অসুস্থতার এই পিরিয়ডে সবাই তা বুঝেও গিয়েছিলো।
হঠাৎই একদিন আল্লাহর রহমতে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। দিনরাত জায়নামাযে পড়ে শুধু একটা কথাই আওরাতে থাকে, আল্লাহ আমার সন্তান যেন সুস্থ থাকে। দেহের ভেতর আস্তে আস্তে বড় হচ্ছিলো আরেকটি দেহ। ১২ সপ্তাহে হঠাৎই একদিন ব্লিডিং শুরু হয়। খালামণি একা বাসায়। এসবে ভয় পেয়ে খালুবাবাকে যে ফোন দিবে অথবা ডাক্তারকে কল করে বলবে এসব কিছুই মাথায় ছিলো না তার। মেন্টাল ট্রমায় ছিলো। অনেক পরে নিজেকে সামলে খালুবাবাকে কল করে বাসায় আসতে বলে। ডাক্তারের সাথে কন্টাক্ট করলে ডাক্তার তাকে ৩ মাসের বেড রেস্ট দেয়। এই তিনমাস যাবতীয় কাজ রান্না বান্না সব খালুবাবাই করেছে তারপর অফিস তো আছেই।
এখন আল্লাহ রহমতে খালামণি অনেকটাই সুস্থ। ডায়বেটিস-ও কন্ট্রলে। বাবু ও সুস্থ আছে আল্লাহর রহমতে। এখন আর খালামণি আগের মতো হাটতে চলতে পারে না ইনফ্যাক্ট কথা বলতেই হাপিয়ে যায়। নিজের ভেতর একটু একটু করে অন্য একটি জীবন কে বড় করে তোলা সহজ কিছু নয়। তবুও..... আর তো কিছুদিন মাত্র তারপর-ই অপেক্ষার অবসান।।