নতুন ভোরের আশায়....!!

7d4410420e1ebb03d6e59a10c573858e.jpg
©

বাসার সবাই কেমন যেনো চুপচাপ। জমির মিয়া বিছানায় শুয়ে শুয়ে সবই লক্ষ্য করছেন। কেউ কাছে আসে না তেমন শুধু ছেলে টাই আসে। তার সন্তান বলতে এই ছেলেই। জমির মিয়ার কাছে তার অসুখ কিছুই না। শুধু নিশ্বাস নিতে কিছুটা সমস্যা হয় কাশি দেয়ার পর। বাকি সব কিছুই ঠিক ছিলো।
হঠাৎ গতকাল ছেলেটা ডাক্তারের কাছ থেকে এসেই কোথায় কোথায় যেনো কথা বললো তারপর কিছুক্ষণের মধ্যে কয়েকজন কিছু জিনিস নিয়ে আসলো। তারপর তার মুখে লাগিয়ে দিলো। তার ছেলে তাকে বললো

বাবা, ডাক্তার বলছে এটা লাগিয়ে রাখতে।

এটা কি?

এটা অক্সিজেন দেয়ার মেশিন, বাবা।

আমার তো কোনো সমস্যা নেই।

হ্যা বাবা, তাও ডাক্তার বলেছেন নিতে থাকেন।

জমির মিয়া ছেলের কথা ফেলতে পারেন না। ছোটো বেলা থেকেই এই ছেলেকে নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন ছিলো। তবে ভয়টি ও ছিলো। সবাই বলে একমাত্র সন্তান নাকি বখে যায় আদরে। তবে সবার চিন্তাকে ভুল প্রমাণ করেছে তার ছেলে। মানুষের মত মানুষ হয়েছে তার ছেলে। এই নিয়ে তার গর্বের শেষ নাই। ছেলে যেমন শিক্ষা দীক্ষায় অনেক বড় হয়েছে তেমনি মানুষ হিসেবে ও তার চেয়ে ভালো।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া কালীন সময়ে জমির সাহেব কখনো আসেন নাই এখানে। তাই দেখেন নি কিন্তু বুঝতে পারেন তার ছেলে কত ভালো ছিলো। ছেলের বিয়ের সময় পর্যন্ত তার কথার বাইরে সে যায় নি। জমির সাহেব যাকে পছন্দ করেছেন তাকেই বিয়ে করেছে। শুধু তাই নয় বিয়ের পর তাকে এবং তার স্ত্রী কে ঢাকায় সাথে রেখে দিয়েছে। এখন তার ছয় মাসের নাতিও রয়েছে। তার সুখের দিন চলে। নাতিকে সামলে সামলেই দিন পার হয়ে যায়। তার বউ বলে

হ্যা পেয়েছো তো নাতি কেই।

অবশ্যই পেয়েছি আমার দাদু তার বাবার মতই হবে।

কিন্তু হঠাৎ পৃথিবীর বুকে নেমে আসে এক কালো অমানিশা। কি এক ভাইরাস সারা পৃথিবীর মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে কত দ্রুত। তার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ায় এই মহামারীর সময়ে বাইরে বের হতে হয় না। আবার তাকেও বের হতে দেয় না। কি এক বদ্ধ জীবন! কিন্তু বাসার সবার কথা ভেবে জমির মিয়া বাইরে যায় নাই। তবে ছেলেকে তো বাজারে যেতেই হয়।

হঠাৎ করে বাসার সবাই ঠান্ডায় আক্রান্ত হয়। জমির মিয়া তার নিজের ছেলে কে নিয়ে চিন্তা করে বেশি। কিন্তু পরীক্ষা করার পর ফল আসে নেগেটিভ। তাতে জমির মিয়ার ধরে প্রাণ ফিরে আসে। কিন্তু তারপর দিন থেকেই তার এই সমস্যা হচ্ছে।
জমির মিয়ার অবস্থা আজ আর একটু খারাপ হয়েছে। শ্বাসকষ্ট কিছুটা বেড়েছে। ছেলে কোথায় যেন বের হলো। কিছুক্ষণ আগে ফিরলো। তবে সাথে কয়েকজন আছে।
তাদের জমির মিয়া আগে থেকেই চেনেন। তারা এসেছে জমিরে মিয়া কে হসপিটালে ভর্তি করাতে নিয়ে যেতে। জমির মিয়া বেশ কয়েকবার বলেছেন

আমাকে নিয়ে যতে হবে না রে বাবা।

আমরা তো এমনি ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি বাবা।

তাহলে এতো রাতে কেনো?

এই প্রশ্নের জবাব কেউ দেয় না। জমির মিয়া ছেলের কাধে ভর করে স্টেচারে শুয়ে পরেন। সবাই মিলে তাকে তুলে নিয়ে যায়। তার ছেলে তাকে এতোটুকু কষ্ট করতে দিতে চায় না। জমির সাহেব এম্বুলেন্সে উঠার সময় ভাবছেন তাকে ফিরতেই হবে তার ছেলের জন্য হলেও তাকে ফিরতে হবে।

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
Join the conversation now
Ecency